জয় মোহন ঘোষের বাবা একজন ড্রাইভার। ওরা তিন ভাই-বোন পড়াশোনা করে। টেনে-টুনে চলে ওদের সংসার।
সকাল গেলে দুপুর গড়ায় না। দুপুর গড়ালে রাতটা যেনো আরো দীর্ঘ হয়ে যায়। এই করতে করতে জয় মোহন বড়ে
হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজে ভালো ফলাফল করেছে। ভর্তি হয়েছে গোপালগঞ্জ (BSMRSTU) ইউনিভার্সিটিতে।
আইন বিভাগে। আইনজীবী হয়ে পরিবারের দুঃখ ঘুচানোর স্বপ্নে যখন সে বিভোর, তখনই এক দুঃস্বপ্ন এসে
আঘাত হানে জয় মোহনের জগতে। জয় মোহনের বাবা হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। —কী করে চলবে জয়
মোহনের পরিবার? —কী করে চলবে নিজের পড়াশুনার খরচ? জয় মোহনের জানা নেই সে উত্তর!
এদিকে তানভীর রশিদের বাবা হলেন শ্রেফ কৃষক। একজন কৃষকপুত্র বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। স্বপ্নটা অনেক
বড়ো। কিন্তু সাধ্যটা মধ্যাহ্নের ছায়ার মতোই খর্ব! তানভীরের বাবা প্যারালাইজড হয়ে বিছানাশ্রয়ী হয়েছেন।
সাধ্যের কাছে হার মানে বিনোদপুর কলেছের ছাত্র তানভীর। অর্থাভাবে বিজ্ঞান বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক
বিভাগে পড়াশুনা শুরু করে সে। তারপরও পড়াশুনা চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
জয় মোহন ঘোষ ও তানভীরের মতো আরো অনেকের ব্যাথাতুর জীবনাখ্যান নিয়ে আমার সামনে হাজির হয় একজন
শিক্ষক। এমআইএসটি’র (মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি) শিক্ষক ড. মাহবুবুর রহমান।
জীবনের ঘাত-সংঘাত যাদের স্বপ্নকে পঙ্গু করতে আসে, ড.মাহবুব তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান ঢাল হয়ে। তিনি
মানুষের দ্বারে দ্বারে অর্থ সংগ্রহ করেন। সে অর্থ পৌঁছে দেন সেইসব মেধাবীদের কাছে—যারা আগামীর
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার বারুদ। আমি বহুদিন এমন একজন অসাধারণ শিক্ষককে খুঁজে পাইনি। এমন একজন
মানুষের কাজে আমি সাড়া দেই। জয় মোহন আর তানভীরে বাৎসরিক বৃত্তির দায়িত্ব নেই।
পাঠক, এই ক্ষুদ্র কর্মের কথাটা উচ্চারণের তিলতম ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু উচ্চারণ করেছি, পরিচিতদের
বিশ্বাসের জায়গাটাকে শক্ত করার জন্য। জয় মোহন ঘোষ আর তানভীরই শুধু আমাদের আশপাশের ব্যাথাতুর
উপাখ্যান নয়। তাদের মতো আরো অনেক স্টুডেন্ট সামান্য অর্থের জন্য পড়তে পারছে না। ড. মাহবুব তার
সাধ্যমতো সেসব স্টুডেন্টদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের কাছে সাহায্য চাচ্ছেন। আমাদের সাহায্য
পেলেই তিনি সেসব ছেলে-মেয়েদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারবনে। নচেৎ কী করে কী করবেন?
ইউরোপ-আমেরিকার বহু প্রবাসীকে আমি জানি, চিনি। তাদের হৃদয় অনেক বড়ো। তারাও মানুষের পাশে আশা হয়ে
দাঁড়াতে চান। কখনো কখনো হয়তো একটা বিশ্বাসযোগ্য রেফারেন্সের অভাবে দাঁড়ানো হয় না। তাই তাদের কাছে
আহ্বান করছি, ড. মাহবুব এর ছোট্ট সংগঠন Moral Parenting এর পাশে দাঁড়ানো। সংগঠনটি হয়তো এখনো
তেমন গুছানো না। তবে তার কর্ম ও স্বচ্ছতা অসাধারণ। নিভৃতের এমন এক সাদা হৃদয়ের সাথে ও পাশে থাকলে
মনে হয়, বাংলাদেশের হৃদয়েই তো আছি!
……..
রউফুল আলম,
নিউ জার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।