যে পরিশ্রম করে সে এগিয়ে থাকে !

যে পরিশ্রম করে সে এগিয়ে থাকে !

সোহাগ একদিন আক্ষেপ করে ফেসবুকে লিখেছিল “আগামীকাল পরীক্ষা, ব্যাচমেটরা পড়ছে; আর আমি ছুটে চলেছি শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে”।

ওকে ছুটে চলতে হয়; অনেকগুলো টিউশনি! কারন ওকে শুধু নিজের চিন্তা করলে চলে না, সাথে মায়ের চিন্তাটাও ওর মাথায়। তাই সাইকেল চালিয়ে ১০-১২ মাইল ছুটতে হয় টিউশনি করতে।

আমি সবসময় আমাদের ছেলেমেয়েদের বলি, “ব্যস্ত থাকা আল্লাহ্‌ এর অসীম রহমতের মধ্যে অন্যতম; যে পরিশ্রম করে সে এগিয়ে থাকে”! সোহাগ সেটা প্রমান করেছে; এত পরিশ্রম করে পড়াশুনা করেও এই সেমিস্টারে GPA-3.96 পেয়ে বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।

রেজাল্ট হাতে পেয়ে সাথে সাথে আমাকে ফোন দিয়েছে; খুশিতে উত্তেজনায় তখনো কাঁপছিল মনে হলো। সোহাগ আমাদের মোরাল চাইল্ডদের জন্য অনুপ্রেরণা।

একদম মা পাগল ছেলে, মা’ই ওর জীবনের সব, কারন এই দুনিয়ার মা ছাড়া ওর আপন কেও নাই। ও একবার অসুস্থ হয়েছিল, আমাকে বল্ল স্যার, আমি মরে গেলে আমার মা’য়ের কি হবে? আমার মা কে একটু দেইখেন! কথাটা মনে হলে এখনও আমার চোখ ভিজে আসে।

সোহাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগে পড়ছে।  

অনেক অনেক অভিনন্দন, সোহাগ! তোমার আর তোমার মায়ের স্বপ্ন অচিরেই পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ্‌!

সোহাগের মোরাল প্যারেন্ট কেও অভিনন্দন!!  সোহাগের এই ফলাফলে আপনার অবদান অনস্বীকার্য!

বিশাল একটা খুশির খবর !!!

বিশাল একটা খুশির খবর !!!

আমাদের মোরাল চাইল্ড হাবীব  Erasmus Mundus Scholarship এর জন্য নির্বাচিত হয়েছে। Erasmus Mundus Scholarship, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের fully-funded স্কলারশীপ; এটি বিশ্বের ভাল স্কলারশীপ গুলোর মধ্যে অন্যতম।  

ইনশাআল্লাহ্‌, হাবীব এই সেপ্টেম্বরে ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। এই স্কলারশীপের অধীনে সে ইতালী, পর্তুগাল, গ্রীস  এর নামকরা তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার সুযোগ পাবে।

হাবীব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত বিভাগ থেকে পাশ করেছে। আমেরিকা প্রবাসী একজন মোরাল প্যারেন্ট গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে হাবীবের পাশে ছিলেন। হাবীবের সম্পর্কে জানতে ওর পূরান ফাইল গুলো দেখছিলাম, সেখানে ওর বৃত্তির আবেদনপত্রটি পেলাম। ও লিখেছিল, “—- অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে হলের ডাইনিং এ দু’বেলা খেয়ে (সকালবেলা না খেয়ে) কোনরকমে মানবেতর জীবনযাপন করছি। পরিমিত খাদ্যের অভাবে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এখন আমার ওজন দাড়িয়েছে ৪৫ কেজি, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৯ কেজী কম —-  ”।

ইনশাআল্লাহ্‌, এই দুঃসহ স্মৃতি গুলো এখন থেকে ওর জীবনে অতীত স্মৃতি হয়ে যাবে। সামনে ওর জীবনে সুদিন আসছে। হাবীব এখন শুধু ওর পরিবারের জন্য গর্ব নয়, ও মোরাল প্যারেন্টিং পরিবারের জন্যও সে গর্ব বয়ে এনেছে; আমাদের অন্যান্য মোরাল চাইল্ডদের জন্যও অনুপ্রেরনার!

দোয়া করি, হাবীব তার সকল ফর্মালিটিজ নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে সমাপ্ত করে যথাসময়ে উড়াল দিক তার স্বপ্নের দেশে! অভিনন্দন হাবীব!! অভিনন্দন মোরাল প্যারেন্ট

সোনার মেয়ে আমেনা এবার ডাক্তার হবে!!

সোনার মেয়ে আমেনা এবার ডাক্তার হবে!!

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার সাথে সাথে, প্রথমে ভলেন্টিয়ার স্যার, এক কিছুক্ষন পর আমেনা খুশিতে গদগদ হয়ে আমাকে ফোন করে জানাল সে খুলনা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। সংবাদটা শুনে এতটা খুশি হলাম, মনে হলো আমার নিজের সন্তানের সুখবর শুনছি।

মেয়েটাকে সেই স্কুল লাইফ থেকে আমরা প্যারেন্টিং করছি। ওর বাবা ওকে আর ওর মাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সেই থেকে মা মেয়ের সংগ্রাম শুরু! মায়ের নির্দিষ্ট কোন আয় নেই; কায়িক শ্রম দিয়ে সংসার চালান।

এস এস সি পরীক্ষায় চমৎকার রেজাল্ট করার পর একটি পোষ্টে আক্ষেপ করে লিখেছিলাম, এমন সোনার মেয়েকে ছেড়ে কেমনে বাবা অন্য কোথাও চলে যায়!!

এর পর অনেক চড়ায় উৎরাই পার হতে হয়েছে; প্রথমে একজন মোরাল প্যারেন্ট ওকে ৩ বছর মত সাপোর্ট করেন; পরে তিনি আর কন্টিনিঊ না করতে পারায় মেয়েটি খুব হতাশ হয়ে পড়ে। পরে আরেকজন মোরাল প্যারেন্ট ওর দায়িত্ব নেন; তিনিই এখন পর্যন্ত পাশে আছেন; সামনের দিন গু;লোতেও থাকবেন বলে কথা দিয়েছেন।

অভিনন্দন আমেনার মোরাল প্যারেন্টসদের!
শুভ কামনা, আমেনা!!!
তুমি তোমার দুখিনী মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছ; আল্লাহ্‌ তোমার মনের আশা পূরণ করুন!!

ফর্ম ফিলাপ যদি করতেই না পারত তাহলে এই রেজাল্ট আসত কেমনে ???

ফর্ম ফিলাপ যদি করতেই না পারত তাহলে এই রেজাল্ট আসত কেমনে ???

মাস দেড়েক আগের ঘটনা! টাকার অভাবে জয় ফাইনাল পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করতে পারছিল না; ওর মোরাল প্যারেন্ট এটা জানতে পেরে সাথে সাথে ওকে টাকাটা পাঠিয়ে দেন। জয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কয়েকদিন আগে সেই পরীক্ষার রেজল্ট বের হয়েছে। দেখেন, কি চমৎকার ফলাফল!! জয় আমাদের গর্ব!  পরীক্ষার রেজাল্ট জানিয়ে মোরাল প্যারেন্টকে লেখা ইমেইলটি সরাসরি এখানে দিলামঃ   

“সম্মানিত মোরাল প্যারেন্ট,  প্রথমে আমার সালাম নিবেন, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনি সহ আপনার পরিবারের সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। অক্টোবর মাসে আমার ৪র্থ বর্ষের ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা হয়েছিল এবং গতকাল সেটির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, আল্লাহর অশেষ রহমতে  এবার সিজিপিএ .৭৩ পেয়ে ২য় হয়েছি আর SGPA : 3.88 পেয়ে প্রথম হয়েছি। আপনি আমাকে ফর্ম ফিলাপ আর ভর্তির জন্য ৩৫০০ টাকা দিয়েছিলেন, টাকাটা না পেলে হয়তো পরীক্ষা দিতে পারতাম না। এজন্য আপনাকে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। আপনি তো জানেন, বাবা পড়াশোনার খরচ চালাতে সম্পুর্নরুপে অপারগ, হয়তো আপনি আমাকে সাহায্য না করলে পড়াশোনা চালানো খুব কস্ট হয়ে যেত। আমার ডিসেম্বর মাসে অনার্স শেষ হবে, ডিসেম্বরের তারিখের মধ্যে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা বলেছেন শ্রদ্ধেয়  স্যারম্যাডামগণ।   আমার জন্য দোয়া করবেন! আপনার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে ইনশাআল্লাহ আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাবো।“ 

শাকিলের সাফল্যে আমরা গর্বিত !!!

শাকিলের সাফল্যে আমরা গর্বিত !!!

ছেলেটি প্রথম প্রথম আমার সাথে ফোনে কথা বলার সময় কেঁদে দিত; বলত, “স্যার এভাবে আন্তরিকতা দিয়ে আমার সাথে কেও কথা বলে না, আপনাকে সামনে পেলে পা ছুঁয়ে সালাম করব”। ওর বাবা আর এক ভাই বাক-প্রতিবন্ধি হওয়ায় সমাজের মানুষজন ওদের পরিবারকেে একটু অন্য চোখে দেখত। সেই ছেলে এখন এক সাথে ৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে (রা বি, চ বি, ঢা বি); ইনশাআল্লাহ্ ও ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। যে প্রতিবেশীরা ওকে করুনার চোখে দেখত সেই প্রতিবেশীদের কাছে ও এখন গর্ব! ওকে খুঁজে পাওয়ার গল্পটাও অন্য রকম। আমাদের এক বন্ধু নরসিংদী হসপিটালের ডাক্তার; ছেলেটি ওর বাবাকে নিয়ে এসেছিল ডাক্তার দেখাতে। গল্পে গল্পে ডাক্তার জানতে পারেন ওদের পরিবারের অবস্থা; উনি তার ফ্রি চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেন আর ছেলেটিকে মোরাল প্যারেন্টিং এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে বলেন। সেই স্কুল লাইফ থেকে জাপান প্রবাসী একজন মোরাল প্যারেন্ট ওকে বৃত্তি দিয়ে আসছেন; আর ডাক্তার সাহেব ওর ভলেন্টিয়ার হয়ে স্থানীয় ভাবে দেখাশুনা করেন। দীর্ঘদিন ধরে ছেলেটির আচার ব্যবহারে ডাক্তার বন্ধু এতটাই খুশি যে, সম্প্রতি জাপান প্রবাসী ভাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ছেলেটিকে তার নিজের মোরাল চাইল্ড করে নিয়েছেন। আসলে আমাদের প্রতেকেরই নির্দিষ্ট মোরাল চাইল্ড আছে; তারপরও আমরা মনে করি সকল মোরাল চিলড্রেনই আমাদের নিজেদের সন্তানের মত। আমরা যে যেভাবে পারি, যতটুকু পারি ওদের সংগ্রামের পাশে দাড়িয়েছি; থাকব ওদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত, ইনশাআল্লাহ্!!!   

দুঃখী ছেলেটির খুশির খবর!

দুঃখী ছেলেটির খুশির খবর!

অফিসের কাজে বিজি ছিলাম; একজন মোরাল চাইল্ড বারবার ফোন দিচ্ছে; কেটে দেওয়ার পরও দিচ্ছে। মেজাজটা একটু খারাপই হলো; কারন মোরাল চিলড্রেনদের বারবার বলেছি সরাসরি ফোন না দিতে, sms দিতে; কখন কোন অবস্থায় থাকি! আর এই ছেলে ফোন কেটে দেওয়ার পরও ফোন দিয়ে যাচ্ছে। পরে আমি একটা ম্যাসেস পাঠালাম, SMS plz! ফিরতি ম্যাসেজে যে রিপ্লাই এল আমি সব কাজ ফেলে নিজেই ফোন দিলাম!

স্যার আমি রাজশাহী ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি,পজিশন — (একদম প্রথম দিকে), যে সাবজেক্ট চাইব সেটাই পাব; স্যার কোন সাবজেক্ট নিব বলেনতো… এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল!  আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে কথা জড়িয়ে আসছিল।

অনেকের জন্য হয়ত এটা খুব একটা বড় সংবাদ না। কিন্তু মামুনের জন্য এটা অনেক বড় স্বপ্ন পূরণ। সকল পরীক্ষায় GPA-5 পেয়ে খুশিতে শহরের কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিল। বাবা মারা গেছেন ছোটবেলায়, থাকে নানা বাড়ী, কয়েক বছর আগে নানা-নানীও মারা গেছে; মামারা একটা থাকার রুম দিয়েছেন, সেখানেই ওদের সংসার। মায়ের নির্দিষ্ট কোন অ্যায় নেই। শহরে এসে বুঝতে পারে এখানে থাকা খাওয়ার খরচ তার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। পড়াশুনা একপ্রকার যখন বন্ধ হবার পথে তখন আমরা ওর খোঁজ পাই। গত প্রায় ২ বছর যাবত জাপান প্রবাসী এক মোরাল প্যারেন্ট ওর পাশে থেকে ওকে সাহায্য করে যাচ্ছেন।

সামনে আরো কিছু ভার্সিটির রেজাল্ট দিবে, সেখানেও হয়ত ও চান্স পাবে। যেখানেই পড়ুক, মামুন ভালমানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হোক; ওর মায়ের মুখে হাসি ফোটাক, এটাই আমাদের কামনা। আমরা মামুনের পাশে আছি, থাকব যতদিন ওর প্রয়োজন!